নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় তৃতীয় অধ্যায় সৌরজগৎ ও ভূমন্ডল
তৃতীয় অধ্যায় সৌরজগৎ ও ভূমন্ডল অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে রাখি সৌরজগৎ : সূর্য এবং এর গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ, ধূমকেতু, উল্কা নিয়ে সূর্যের যে পরিবার তাকে বলা হয় সৌরজগৎ। সৌরজগতের প্রাণকেন্দ্র হলো সূর্য। সৌরজগতের ৮টি গ্রহ, ৪৯টি উপগ্রহ, হাজার হাজার গ্রহাণুপুঞ্জ ও লক্ষ লক্ষ ধূমকেতু রয়েছে। সূর্য : সৌরজগতের সকল গ্রহ ও উপগ্রহের নিয়ন্ত্রক হলো সূর্য। সূর্য একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। গ্রহ : মহাকর্ষ বলের প্রভাবে মহাকাশে কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিক্রমণ করছে; এদের গ্রহ বলা হয়। সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা ৮টি। বুধ (গঁৎপঁৎু), শুক্র (ঠবহঁং), পৃথিবী (ঊধৎঃয), মঙ্গল (গধৎং), বৃহস্পতি (ঔঁঢ়রঃবৎ), শনি (ঝধঃঁৎহ), ইউরেনাস (টৎধহঁং), নেপচুন (ঘবঢ়ঃঁহব)। গুরুমণ্ডল : অশ্মমণ্ডলের নিচে প্রায় ২,৮৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত মূলত ব্যাসল্ট শিলা দিয়ে গঠিত পুরুমণ্ডলকে গুরুমণ্ডল বলে। কেন্দ্রমণ্ডল : গুরুমণ্ডলের নিচ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত মণ্ডলটিকে কেন্দ্রমণ্ডল বলে। এ স্তর প্রায় ৩,৪৮৬ কিলোমিটার পুরু। অক্ষাংশ : পৃথিবীর কেন্দ্র দিয়ে উত্তর দক্ষিণে কল্পিত রেখাকে অক্ষ (অীরং) বা মেরুরেখা বলে। দুই মেরু থেকে সমান দূরত্বে পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে। এ রেখাকে বলা হয় নিরক্ষরেখা বা বিষুবরেখা। নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থিত কোনো স্থানের কৌণিক দূরত্বকে সেই স্থানের অক্ষাংশ বলে। ২৩.৫ উত্তর অক্ষাংশকে বলা হয় কর্কটক্রান্তি। ২৩.৫ দক্ষিণ অক্ষাংশকে বলা হয় মকরক্রান্তি। বিষুবরেখাকে বলা হয় মহাবৃত্ত। দ্রাঘিমারেখা : নিরক্ষরেখাকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগ বিন্দুর ওপর দিয়ে উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয়েছে তাকে দ্রাঘিমারেখা বলে। দ্রাঘিমারেখাকে মধ্যরেখাও বলা হয়। মূল মধ্যরেখা : যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের উপকণ্ঠে গ্রিনিচ মান মন্দিরের ওপর দিয়ে উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত যে মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে তাকে মূল মধ্যরেখা বলে। এই রেখার মান ০ ধরা হয়েছে। সমাক্ষরেখা : পৃথিবীর বৃত্তের কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণ ৩৬০। এই কোণকে ডিগ্রী (), মিনিট () ও সেকেন্ডে () বিভক্ত করা হয়। নিরক্ষরেখা থেকে প্রত্যেক মেরুর কৌণিক দূরত্ব ৯০। এই কোণকে ডিগ্রী ও মিনিটে ভাগ করে নিরক্ষরেখার সমান্তরাল যে রেখা কল্পনা করা হয় তাকে সমাক্ষরেখা বলে। স্থানীয় সময় : পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোনো স্থানে সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর আসে বা সর্বোচ্চে অবস্থান করে তখন ঐ স্থানে মধ্যাহ্ন এবং ঐ স্থানের ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা ধরা হয়। এ মধ্যাহ্ন সময় থেকে দিনের অন্যান্য সময় স্থির করা হয়। একে ঐ স্থানের স্থানীয় সময় বলা হয়। প্রমাণ সময় : প্রত্যেক দেশেই সেই দেশের মধ্যভাগের কোনো স্থানের দ্রাঘিমারেখা অনুযায়ী যে সময় নির্ণয় করা হয় সে সময়কে ঐ দেশের প্রমাণ সময় বলে। প্রতিপাদ স্থান : ভ‚পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত কোনো বিন্দুর ঠিক বিপরীত বিন্দুকে সেই বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলে। আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা : জলভাগের ওপর মানচিত্রে ১৮০ দ্রাঘিমারেখাকে অবলম্বন করে একটি রেখা কল্পনা করা হয়েছে। এটিই আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। আিহ্নক গতি : পৃথিবীর একটি পূর্ণ আবর্তনের সময়কে সৌরদিন বলে। নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর আিহ্নক গতির বেগ সবচেয়ে বেশি। এখানে পৃথিবীর আিহ্নক গতি ঘণ্টায় ১,৬১০ কিলোমিটারেরও বেশি। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে এ গতিবেগ শূন্যের কাছাকাছি। বার্ষিক গতি : পৃথিবী সৌরজগতের অন্যতম গ্রহ বলে পৃথিবীও প্রতিনিয়ত উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীর এ পরিভ্রমণকে পরিক্রমণ গতি বা বার্ষিক গতি বলে। জোয়ার-ভাটার কারণ : প্রধানত দুটি কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয় যথা : ১. চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব। ২. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন কেন্দ্রাতিগ শক্তি। জোয়ার-ভাটার প্রভাব : মানবজীবনে জোয়ার-ভাটার অনেক প্রভাব দেখা যায়। জোয়ার-ভাটার প্রভাবে নদীর মোহনা পরিষ্কার থাকে, জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা হয় ইত্যাদি। বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর ১. ইউরেনাসের উপগ্রহ কোনটি? ক ক্যাপিটাস এরিয়েল গ নেরাইড ঘ গ্যানিমেড ২. শনির বায়ুমণ্ডলে কোন গ্যাসগুলোর মিশ্রণ রয়েছে? ক নাইট্রোজেন ও হিলিয়াম হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ কার্বন ডাই অক্সাইড ও হিলিয়াম ঘ অক্সিজেন ও হিলিয়াম ৩. পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে পরিক্রমণ করার কারণেÑ র. বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব হয় রর. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে ররর. দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যরে তারতম্য ঘটে নিচের কোনটি সঠিক? ক র খ র ও রর র ও ররর ঘ রর ও ররর নিচের অনুচ্ছেদটি পড় এবং ৪ ও ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও। অর্পিতা প্রতিদিন খুব ভোরে পড়তে বসে। একদিন সে লক্ষ করে, পূর্বদিকের আকাশে ভোরবেলাতেও একটি তারা দেখা যাচ্ছে। অর্পিতা বুঝতে পারে যে সে একটি গ্রহ দেখেছে। ৪. অর্পিতার দেখা গ্রহটির নাম কী? শুক্র খ শনি গ মঙ্গল ঘ নেপচুন ৫. পৃথিবীর সাথে উক্ত গ্রহের কোন বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হবে? গ্রহটির উপগ্রহ নেই খ গ্রহটিতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকে গ গ্রহটির চারদিকে বলয় আছে ঘ গ্রহটি নীলাভ বর্ণের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন \ ১ \ কোনটি একটি উজ্জ¦ল নক্ষত্র? উত্তর : সূর্য একটি উজ্জ¦ল নক্ষত্র। প্রশ্ন \ ২ \ সূর্য পৃথিবী অপেক্ষা কত লক্ষ গুণ বড়? উত্তর : সূর্য পৃথিবী অপেক্ষা ১৩ লক্ষ গুণ বড়। প্রশ্ন \ ৩ \ সূর্য কত দিনে নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তন করে? উত্তর : সূর্য ২৫ দিনে নিজ অক্ষের উপর একবার আবর্তন করে। প্রশ্ন \ ৪ \ কোনটি সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ? উত্তর : বুধ সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ। প্রশ্ন \ ৫ \ সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে বুধের কত দিন সময় লাগে? উত্তর : সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে বুধের ৮৮ দিন সময় লাগে। প্রশ্ন \ ৬ \ পৃথিবীর আয়তন কত বর্গকিলোমিটার? উত্তর : পৃথিবীর আয়তন ৫১০,১০০,৪২২ বর্গকিলোমিটার। প্রশ্ন \ ৭ \ সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব কত? উত্তর : সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। প্রশ্ন \ ৮ \ ইউরেনাসের কয়টি উপগ্রহ আছে? উত্তর : ইউরেনাসের ৫টি উপগ্রহ আছে । প্রশ্ন \ ৯ \ শনি গ্রহ পৃথিবী থেকে কত গুণ বড়? উত্তর : শনি গ্রহ পৃথিবী থেকে নয় গুণ বড়। প্রশ্ন \ ১০ \ মঙ্গল গ্রহের কয়টি উপগ্রহ আছে? উত্তর : মঙ্গল গ্রহের ২টি উপগ্রহ আছে । প্রশ্ন \ ১১ \ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ কোনটি? উত্তর : পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চন্দ্র। প্রশ্ন \ ১২ \ নেপচুনের উপগ্রহ কয়টি? উত্তর : নেপচুনের উপগ্রহ দুইটি। অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন \ ১ \ গ্রহ কী? ব্যাখ্যা কর। উত্তর : মহাকর্ষ বলের প্রভাবে মহাকাশে কতকগুলো জ্যোতিষ্ক সূর্যের চারদিকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিক্রমণ করছে; এদের গ্রহ বলা হয়। যথা : বুধ (গঁৎপঁৎু), শুক্র (ঠবহঁং), পৃথিবী (ঊধৎঃয), মঙ্গল (গধৎং), বৃহস্পতি (ঔঁঢ়রঃবৎ), শনি (ঝধঃঁৎহ), ইউরেনাস (টৎধহঁং), নেপচুন (ঘবঢ়ঃঁহব)। গ্রহগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রহ হচ্ছে বৃহস্পতি এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধ। প্রশ্ন \ ২ \ বৃহস্পতি গ্রহ সম্পর্কে বর্ণনা কর। উত্তর : সৌরজগতের সর্ববৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি। সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহের অবস্থান পঞ্চম স্থানে।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় তৃতীয় অধ্যায় সৌরজগৎ ও ভূমন্ডল Read More »