সপ্তম শ্রেণির বাংলা কুলি-মজুর
কুলি-মজুর কাজী নজরুল ইসলাম কবি ও কবিতা সম্পর্কিত তথ্য কবি পরিচিতি নাম কাজী নজরুল ইসলাম। জন্ম পরিচয় জন্ম : ২৪শে মে, ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ (১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ)। জন্মস্থান : বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রাম। পিতৃ-মাতৃপরিচয় পিতার নাম : কাজী ফকির আহমেদ। মাতার নাম : জাহেদা খাতুন। শিক্ষাজীবন কাজী নজরুল ইসলাম প্রথমে গ্রামের মক্তবে ও পরে ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পেশা/কর্মজীবন কাজী নজরুল ইসলাম বাল্যকালে মক্তবে শিক্ষকতা, লেটোর দলে গান রচনা ও রুটির দোকানে কাজ করেন। পরে সেনাবাহিনীতে যোগদান। অতঃপর পত্রিকা সম্পাদনা ও সাহিত্য সাধনাই তাঁর নেশা ও পেশা ছিল। সাহিত্য সাধনা কাব্যগ্রন্থ : অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, সাম্যবাদী, সর্বহারা, সিন্ধু-হিন্দোল, সন্ধ্যা। শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ : ঝিঙে ফুল, সঞ্জিতা, পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে, ঘুম জাগানো পাখি, ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি। প্রবন্ধগ্রন্থ : যুগবাণী, রাজবন্দীর জবানবন্দী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্রমঙ্গল, ধূমকেতু। উপন্যাস : বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা। নাটক : ঝিলিমিলি, আলেয়া, পুতুলের বিয়ে। গানের সংকলন : বুলবুল, চোখের চাতক, গীতি শতদল নজরুলগীতি, গানের মালা। অনুবাদ গ্রন্থ : রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ, রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম। সম্পাদিত পত্রিকা : ধূমকেতু, লাঙল, দৈনিক নবযুগ। পুরস্কার ও সম্মাননা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নাগরিকত্ব প্রদান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ডি-লিট’ উপাধি (১৯৭৪) একুশে পদক (১৯৭৬) প্রদান। জীবনাবসান ২৯শে আগস্ট, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)। সমাধিস্থান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ। সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর প্রশ্ন- ১ ল্ফল্ফ চেয়ারম্যান আজমল সাহেবের এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, কিন্তু তার ছেলে কারণে-অকারণে বাড়ির কাজের লোক, আশে-পাশের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। চেয়ারম্যান ছেলেকে ডেকে বুঝিয়ে বলেন, তুমি যাদের আজ তুচ্ছ জ্ঞান করছ- সত্যিকার অর্থে তারাই আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা, তাদের কারণেই আমরা সুন্দর জীবন যাপন করছি। ক. ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় রেলপথে কোনটি চলে? খ. ‘শুধিতে হইবে ঋণ’- কথাটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? গ. চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের আচরণে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে – ব্যাখ্যা কর। ঘ.“চেয়ারম্যান সাহেবের মনোভাব ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন”- বিশ্লেষণ কর। ক “কুলি-মজুর” কবিতার রেলপথে রেলগাড়ি চলে। খ কবি আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা ধনিকশ্রেণি ও শোষণ নির্যাতনকারীদের প্রতি হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেছেন। শ্রমজীবীরাই মানবসভ্যতার রূপকার। এদের শ্রম ও ঘামে মোটর, রেলগাড়ি ও জাহাজ চলছে। কিন্তু এরাই সমাজে নানাভাবে বঞ্চিত। এক শ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ এদের শোষণ করে বিশাল ধন-সম্পদের মালিক হয়েছে। মূলত কবি এসব মানুষকে লক্ষ করেই আলোচ্য হুঁশিয়ার বাণী উচ্চারণ করেছেন। গ উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলের আচরণে ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় শোষকশ্রেণি কর্তৃক শোষিত শ্রেণির নিপীড়িত হওয়ার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় বলেছেন- যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরদের মতো লক্ষকোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। এদেরই অক্লান্ত শ্রমে চলছে মোটর, জাহাজ, রেলগাড়ি; গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। এদের শোষণ করেই ধনিকশ্রেণি হয়েছে বিত্ত ও সম্পদের মালিক। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এই কুলি-মজুররাই সবচেয়ে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান আজমল সাহেব এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে খ্যাত কিন্তু তার ছেলে কারণে অকারণে বাড়ির কাজের লোক, আশপাশের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। চেয়ারম্যান ছেলেকে ডেকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন, তুমি যাদের তুচ্ছ করে অবজ্ঞা করছ এরাই সত্যিকার অর্থে আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা, তাদের কারণেই আমরা সুন্দর জীবনযাপন করছি। অর্থাৎ উদ্দীপকে বর্ণিত চেয়ারম্যান আজমল সাহেবের ছেলের আচরণে সমাজের নিম্নশ্রেণির মানুষকে অবহেলার চিত্র প্রতীকীভাবে চিত্রিত হয়েছে। ঘ “চেয়ারম্যান সাহেবের মনোভাব ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন”- মন্তব্যটি যথার্থ। কাজী নজরুল ইসলাম ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় সেসব মানুষের জয়গান করেছেন যারা পৃথিবীর সভ্যতাকে নিজেদের শ্রম দিয়ে গড়ে তুলছেন। মোটর, জাহাজ, রেলগাড়ি, দালানকোঠা তাদের শ্রমেরই ফসল। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান আজমল সাহেবও ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় মানব সভ্যতার রূপকার শ্রমজীবী মানুষদের জয়গান করা হয়েছে। উদ্দীপকের চেয়ারম্যান আজমল সাহেবের ও এলাকায় একজন ভালো মানুষ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে, কিন্তু তার ছেলে কারণে-অকারণে বাড়ির কাজের লোক, আশপাশের খেটে খাওয়া মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। চেয়ারম্যান ছেলেকে বলেন, তুমি যাদের আজ তুচ্ছ জ্ঞান করছ- সত্যিকার অর্থে তারাই আধুনিক সভ্যতার নির্মাতা, তাদের কারণেই আমরা সুন্দর জীবন যাপন করছি। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায়ও কবি বলেছেন, পৃথিবীর সভ্যতা জন্ম নিয়েছে শ্রমজীবী মানুষের হাত ধরে। কিন্তু সেসব শ্রমজীবী সভ্যতার সুখ ভোগ করতে পারে না। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের মনোভাব ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন। প্রশ্ন- ১ ল্ফল্ফ বেতন দিয়াছ? – চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল! কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্? রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে, রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে, বল তো এসব কাহাদের দান! ক. কবি কাদের বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন? ১ খ. কবি কাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন? ব্যাখ্যা কর। ২ গ. সমাজ উন্নয়নে শ্রমিকদের কীভাবে ব্যবহার করা উচিত? উদ্দীপকের আলোকে উপস্থাপন কর। ৩ ঘ.উদ্দীপকে মানবসভ্যতার যে দিক তুলে ধরা হয়েছে তা বিশ্লেষণ কর। ৪ ক কবি কুলিদের বেতন দেওয়ার কথা বলেছেন। খ কবি শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শ্রমজীবীদের শোষণ করেই ধনিকশ্রেণি সম্পদের পাহাড় গড়েছে। শ্রমিকদের শ্রমে ও ঘামে রাজপথে মোটর, সাগরে জাহাজ এবং রেলপথে রেলগাড়ি চলছে, কলকারখানা ও দালানকোঠা গড়ে উঠেছে। অথচ তারা এর বিনিময়ে উপযুক্ত মজুরি পাচ্ছে না। কিন্তু ধনীরা শ্রমিকদের যথার্থ প্রাপ্য দিচ্ছে বলে মিথ্যা কথা বলে। কবি সেজন্য শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গ সমাজ উন্নয়নের জন্য শ্রমিকদের প্রাপ্য সম্মান দেয়া উচিত। সমাজ উন্নয়নে শ্রমিকদের যথার্থ মর্যাদা দেয়া উচিত। কারণ যুগে যুগে কুলি-মজুরদের মতো শ্রমজীবী মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে আধুনিক মানবসভ্যতা। তাদের আত্মত্যাগে সমাজের উন্নতি সাধিত হয়েছে। শ্রমিকের হাত হলো সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাদের পরিশ্রমেই গড়ে ওঠে বড় বড় প্রাসাদ-দালান, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর- তাঁরা তাদের রক্ত, ঘামে পরিণত করে প্রতিনিয়ত সমাজ গড়ে তোলার কাজে, মানবসভ্যতা বিকাশের কাজে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো তারা তাদের শ্রমের মূল্যায়ন কখনো পায় না বরং তারা সবখানে হয় নির্যাতিত, নিপীড়িত। সমাজের উঁচুতলার মানুষগুলো কখনো তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না, মূল্যায়ন করে না তাদের অবদানকে। সমাজ উন্নয়নে শ্রমিকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা উচিত। তারা যেন তাদের উপযুক্ত মজুরি পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। উপযুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মালিকপক্ষকে সহানুভ‚তিশীল হতে হবে এবং তাদেরকে শ্রমিকদের সহযোগী হিসেবে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে তবেই সমাজের উন্নয়ন সম্ভব। তাই উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, সমাজ উন্নয়নে শ্রমিকদের প্রাপ্যটুকু বুঝে দিতে হবে। ঘ উদ্দীপকে মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রায় শ্রমজীবীদের অবদান এবং তাদের প্রতি অবিচার ও বঞ্চনার দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। কবিতায় কবি মানবসভ্যতা গড়ে তোলার প্রধান কারিগর কুলি-মজুররা যে সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত শ্রেণি হিসেবে বিবেচিত তা তুলে ধরেছেন। সেই আদিম সমাজ থেকে শুরু করে আজ অবধি সমাজ ও সভ্যতার যে বিকাশ তার নেপথ্যে রয়েছে এই শ্রমজীবী শ্রেণি। অথচ তাদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্যায়ন তারা কখনো পায়নি, সমাজসভ্যতা কখনো তাদের ত্যাগকে সঠিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি, এটি মানবসমাজ ও সভ্যতার এক
সপ্তম শ্রেণির বাংলা কুলি-মজুর Read More »