সপ্তম শ্রেণির আনন্দ পাঠ তোতাকাহিনী

তোতাকাহিনী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
 লেখক পরিচিতি
নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
জন্ম পরিচয় জন্ম তারিখ : ৭ই মে, ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ (২৫শে বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)।
জন্মস্থান : জোড়াসাঁকো, কলকাতা, ভারত।
পারিবারিক পরিচয় পিতার নাম : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
পিতামহের নাম : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
সাহিত্য সাধনা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : মানসী, সোনার তরী, ক্ষণিকা, চোখের বালি, ঘরে-বাইরে, গোরা, যোগাযোগ, রক্ত করবী, শেষের কবিতা, গল্পগুচ্ছ ইত্যাদি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তাঁর প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ প্রকাশিত হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা নোবেল পুরস্কার (১৯১৩)।
মৃত্যু ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)

অনুশীলনী : বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
১. কোন কাব্যগ্রন্থের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন? ঝ
ক. মানসী খ. সোনার তরী
গ. চিত্রা ঘ. গীতাঞ্জলি
২. পাখিটাকে রাখা হয়েছিলÑ চ
ক. সোনার খাঁচায় খ. রুপার খাঁচায়
গ. লোহার খাঁচায় ঘ. বাঁশের খাঁচায়
৩. গল্পটিতে ‘নির্বোধ’ চরিত্র কোনটি? ছ
ক. পাখি খ. রাজা
গ. ভাগিনা ঘ. নিন্দুকেরা
৪. ‘ভাগিনা’ চরিত্রে কোন ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে?
র. নির্বুদ্ধিতা
রর. চাটুকারিতা
ররর. স্বার্থপরতা
নিচের কোনটি সঠিক? জ
ক. র ও রর খ. র ও ররর
গ. রর ও ররর ঘ. র, রর ও ররর
উদ্ধৃতাংশটি পড়ো এবং ৫, ৬ ও ৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও :
পাখি আসিল। সঙ্গে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, ঘোড়সওয়ার আসিল, রাজা পাখিটাকে টিপিলেন, সে হঁ করিল না, হুঁ করিল না। কেবল তার পেটের মধ্যে পুঁথির শুকনো পাতা খস্খস্ গজ্গজ্ করিতে লাগিল।
৫. পাখির সঙ্গে উল্লিখিত সকলে কেন এসেছিল? ঝ
ক. পাখির নিরাপত্তার জন্য
খ. রাজার আদেশ রক্ষার জন্য
গ. পাখিকে বিদ্যাদানের উদ্দেশ্যে
ঘ. ছোট কাজে বড় আয়োজনের উদ্দেশ্যে
৬. ‘পাখি হঁ করিল না, হুঁ করিল না’Ñ কেন? চ
ক. পাখির মৃত্যু হয়েছে
খ. পাখির বিদ্যালাভ হয়েছে
গ. পাখি পুঁথি খেয়ে ফেলেছে
ঘ. পাখি কথা বলতে পারে না
৭. উদ্ধৃতাংশটিতে অন্তর্নিহিত শিক্ষা কী?
র. পাখি পুঁথিগত বিদ্যা লাভ করতে পারে না
রর. পাখি তার স্বভাবগত আচরণ করে
ররর. নিন্দুকেরা কেবলই নিন্দা করে
নিচের কোনটি সঠিক? জ
ক. র খ. রর
গ. র ও রর ঘ. র ও ররর
সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
রাজার এক পাখি। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে সে গান গায়, বনের ফল খায়, উড়ে বেড়ায়। একশ্রেণির আত্মস্বার্থসচেতন মানুষ রাজাকে পরামর্শ দেয় পাখিকে শিক্ষা দিতে হবে। কিন্তু প্রকৃতির বিরুদ্ধে সব আয়োজন ব্যর্থ হয়। পাখি পুঁথিপাঠের ভার বহন করতে না পেরে শেষ হয়ে যায়। আর বসন্তের বাতাসে মুকুলিত কিশলয়গুলি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।
ক. রাজার পাখিটির নাম কী? ১
খ. পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার সব আয়োজন ব্যর্থ হয় কেন? ব্যাখ্যা করো। ২
গ. মানুষের ভাষা অন্য প্রাণীকে শেখানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে তোমার অভিমত ব্যক্ত করো। ৩
ঘ. উদ্ধৃতাংশ থেকে রাজা, পরামর্শদাতাবৃন্দ ও পাখির স্বভাবের বৈশিষ্ট্যসমূহ বিশ্লেষণ করো। ৪
১ এর ক নং প্র. উ.
রাজার পাখিটির নাম তোতা।
১ এর খ নং প্র. উ.
মানুষের জন্য যে শিক্ষা তা পাখির জন্য উপযুক্ত নয় বলে তাকে শিক্ষা দেওয়ার সব আয়োজন ব্যর্থ হয়।
 মানুষ আর পাখি এক নয়। পাখির মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের মতো উন্নত নয়। তাই মানুষের মতো করে পাখিকে বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টায় লাভ হয় না। তাছাড়া ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তাতে কোনো মানুষও স্বাচ্ছন্দ্যে শিক্ষা লাভ করতে পারবে না। আর মুক্ত একটি পাখির জন্য তা একেবারেই অসম্ভব।
১ এর গ নং প্র. উ.
মানুষের ভাষা অন্য কোনো প্রাণীকে শেখানোর প্রচেষ্টা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।
 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে একটি মুক্ত বিহঙ্গকে মানুষের মতো শৃঙ্খলিত অবস্থায় শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাকে পুঁথিগত বিদ্যায় পারদর্শী করে তোলার জন্য নানা ফন্দি ফিকির করা হয়। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই বাস্তবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
 প্রকৃতপক্ষে মানুষ আর অন্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে অনেক ব্যবধান। মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তাদের রয়েছে উন্নত ভাষা। কিন্তু সেটি কোনো প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে। যার বাস্তব প্রমাণ গল্পের হতভাগ্য তোতা পাখিটি।
১ এর ঘ নং প্র. উ.
উদ্ধৃতাংশের আলোকে বলা যায়, রাজা ও পরামর্শদাতাদের অবিবেচক আচরণ পাখিটির ধ্বংস ডেকে আনে।
 ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের রাজা তোতা পাখিটিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি মানুষের জন্য প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতিতে একটি পাখিকে শিক্ষা দেওয়া যায় কিনা সেটি ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেননি। পাশাপাশি সমালোচকদের কথায় কান না দিয়ে তোষামোদকারীদের মূল্যায়ন করেছেন। বলা যায় তোতা পাখিটির করুণ পরিণতির জন্য তিনিই মূলত দায়ী।
 গল্পে বর্ণিত রাজার পরামর্শদাতাগণ হৃদয়হীন ও তোষামুদে। অবলা একটি পাখিকে তারা তিলে তিলে নিঃশেষ করে। আর নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সেটিকে যুক্তিযুক্ত হিসেবে রাজার সামনে উপস্থাপন করে। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রকৃত রূপ কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই।
 গল্পের তোতা পাখিটি স্বাধীনচেতা সত্তার প্রতীক। মনের সুখে সে উড়ে বেড়াত, লাফাত। কিন্তু তার এ আনন্দ অবিবেচক রাজার সহ্য হলো না। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শেকল দিয়ে তার পা বাঁধা হলো। ফলে থমকে গেল পাখিটির স্বাভাবিক জীবন। শাস্ত্র পড়া তো আর পাখির কাজ নয়। মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানোতেই তার যত আনন্দ। সে সুযোগ হারিয়ে তার জীবন বিবর্ণ হয়ে পড়ে। একসময় করুণ মৃত্যু হয় তার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মানব সমাজের শিক্ষার্থীদের যন্ত্রণারই চিত্র রূপকায়িত হয়েছে তোতা পাখিটির মধ্য দিয়ে।
[বি: দ্র: প্রশ্নটি সৃজনশীল আঙ্গিকে না হওয়ায় সঠিক পদ্ধতিতে উত্তর দেওয়া গেল না। সঠিক পদ্ধতিটি সম্পর্কে জানার জন্য অধ্যায়ের অংশের প্রশ্নোত্তরগুলো দেখো।]
উদ্ধৃতাংশটি পড়ো এবং প্রশ্নসমূহের উত্তর দাও :
সংসারে অন্য অভাব অনেক আছে, কেবল নিন্দুক আছে যথেষ্ট। তারা বলিল, খাঁচাটার উন্নতি হইতেছে, কিন্তু পাখিটার খবর কেহ রাখে না।
কথাটা রাজার কানে গেল। তিনি ভাগিনাকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।’
ভাগিনা বলিল, ‘নিন্দুকগুলি খাইতে পায় না বলিয়াই মন্দ কথা বলে।’
জবাব শুনিয়া রাজা অবস্থাটা পরিষ্কার বুঝিলেন, আর তখনি ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়িল।
ক. পাখিটাকে কেন খাঁচায় রাখা হয়েছিল? ১
খ. নিন্দুক কারা? তাদের মন্তব্যের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করো। ২
গ. উদ্দীপকের আলোকে ভাগিনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দাও। ৩
ঘ. “নিন্দুকেরা খাইতে পারে না বলিয়াই মন্দকথা বলে’Ñ ভাগিনার এ কথার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ৪
২ নং প্র. উ.
ক. পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য খাঁচায় রাখা হয়েছিল।
খ. যারা অন্যের দোষ-ত্রæটি অনুসন্ধান করে ও সে সম্পর্কে নানা মন্তব্য করে তারাই নিন্দুক।
 ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের নিন্দুকেরা পাখির শিক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থার সমালোচনা করে। রাজার ভাগিনারা যে পাখির শিক্ষার চেয়ে লোক দেখানো কর্মকাণ্ডেই বেশি ব্যস্ত, এ বিষয়টিই রাজার চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছিল তারা। বস্তুত তাদের মন্তব্যে প্রকৃত সত্যটিই প্রকাশিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, রাজার ভাগিনা অত্যন্ত তোষামুদে ও স্বার্থপর প্রকৃতির।
 রাজার ভাগিনা লোভী ও প্রতারক। রাজার অনুগ্রহ লাভের জন্য সে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় নেয়। অবলা তোতা পাখিটাকে সে নানাভাবে কষ্ট দেয়।
 রাজার তোতা পাখিটিকে শিক্ষা দেওয়ার ভার পড়ে ভাগিনার ওপর। ভাগিনা পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য নানা উদ্ভট ব্যবস্থা করে। এর ফলে পাখির উন্নতি হওয়ার বদলে দিন দিন পাখিটা আধমরা হয়ে আসে। ভাগিনার তোষামোদে তুষ্ট হয়ে রাজা ভাগিনাকে অনেক অর্থ দেন। এভাবে পাখিটিকে কষ্ট দিয়ে ভাগিনা নিজের স্বার্থোদ্ধার করে।
ঘ. ভাগিনার স্বার্থান্বেষী মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে আলোচ্য উক্তিটির মাধ্যমে।
 ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের তোতা পাখিটির বিদ্যাশিক্ষার ভার পড়ে রাজার ভাগিনার ওপর। ভাগিনা এটিকে নিজের ভাগ্যোন্নয়নের সুযোগ হিসেবে দেখে। তাই পাখির উন্নয়ন বাদ দিয়ে সে খাঁচাটার উন্নতির জন্য জোর তৎপরতা চালায়। সত্যবাদী সমালোচকরা সেই কথা ফাঁস করে দেয়।
 ভাগিনার ওপর রাজার ছিল অগাধ আস্থা। ভাগিনাও রাজাকে নানাভাবে তোষামোদ করে তাঁর মন জয় করে নিয়েছিল। তাই নিন্দুক তথা স্পষ্টভাষীদের কথাকেও সে অতি সহজে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে। রাজার মনে এই ধারণা দেয় যে, নিন্দুকেরা খেতে না পেয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে মিথ্যা কথা বলছে। রাজাও ভাবলেন ভাগিনার কথাই সত্যি। তাই সে পেল সোনার হার।
 উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার যে রাজার ভাগিনা জেনে বুঝেই তোতা পাখিটির সর্বনাশ করেছে। শিক্ষা দেওয়ার নামে প্রতারণা করে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিয়েছে। অন্যদিকে সমালোচকদের সত্য কথাটিকেও নিজের ক‚টবুদ্ধি দিয়ে গুরুত্বহীন প্রমাণ করেছে। তার লোভী ও অসাধু মানসিকতা এখানে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো,
যুগ-জনমের বন্ধু আমার আঁধার ঘরের আলো
সবাই মোরে ছাড়তে পারে বন্ধু যারা আছে,
নিন্দুক সে ছায়ার মতো থাকবে পাছে পাছে।
বিশ্বজনে নিঃস্ব করে পবিত্রতা আনে
সাধক জনে বিস্তারিতে তার মতো কে জানে?
বিনামূল্যে ময়লা ধুয়ে করে পরিষ্কার
বিশ্বমাঝে এমন দয়াল মিলবে কোথা আর?
ক. নিন্দুক কোথায় গা ঢাকা দিয়েছিল? ১
খ. কী দেখে শরীরে রোমাঞ্চ জাগে? বুঝিয়ে লেখো। ২
গ. রাজার নিকটাত্মীয়দের সাথে উদ্দীপকের নিন্দুকের পার্থক্য তুলে ধরো। ৩
ঘ. ‘নিন্দুকের মতামতও তাৎপর্যপূর্ণ’ Ñউদ্দীপক ও ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো। ৪
৩ নং প্র. উ.
ক. নিন্দুক ঝোঁপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ছিল।
খ. তোতা পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার উদ্ভট প্রক্রিয়া শরীরে রোমাঞ্চ জাগায়।
 রাজার তোতা পাখিটাকে শিক্ষা দেওয়ার প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত অদ্ভুত। পাখিকে দানা-পানি না দিয়ে কেবল পুঁথি হতে রাশি রাশি পাতা ছিঁড়ে কলমের ডগা দিয়ে তার মুখের মধ্যে ঠাসা হচ্ছিল। পাখির অবস্থা এতটাই নাজুক ছিল যে চিৎকার করার ক্ষমতাটুকুও তার ছিল না। শিক্ষা গ্রহণের এমন অবাস্তব পন্থা শরীরে রোমাঞ্চ জাগায় বলে ব্যঙ্গ করেছেন ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের লেখক।
গ. রাজার নিকটাত্মীয়দের ভূমিকা ছিল নেতিবাচক, অন্যদিকে উদ্দীপকের নিন্দুকের ভূমিকা সার্থক।
 ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে বর্ণিত রাজার নিকটাত্মীয়রা পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার নামে যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছিল তার কোনো প্রয়োজন ছিল না। রাজার আত্মীয়-স্বজন পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার নামে অর্থ অপচয়ের মহোৎসবে নেমে পড়ল। অথচ তারা লক্ষ্য অর্জনে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিল। তোতা পাখির শিক্ষা অর্জন তো হলোই না উপরন্তু পাখিটাকে ধীরে ধীরে করুণ পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হলো।
 উদ্দীপকে নিন্দুকের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। নিন্দুক ব্যক্তির দোষ-ত্র“টিকে ধরিয়ে দেয়। এতে করে ব্যক্তি ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। রাজার নিকটাত্মীয়রা রাজার জন্য এমন ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। রাজার অযৌক্তিক কাজকে সমর্থন না দিয়ে তারা যদি রাজাকে সরাসরি তাঁর ত্রæটির ব্যাপারে সচেতন করে দিত তবে রাজা এ ধরনের অযাচিত কাজ থেকে বিরত থাকতেন।
ঘ. নিন্দুকেরা অন্যের ভুল-ত্রæটি সংশোধনে ভ‚মিকা রাখে বলে তাদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া প্রয়োজন।
 ‘তোতাকাহিনী’ রচনাটিতে নিন্দুকেরা অনেক ঝুঁকি নিয়েও রাজাকে সত্য বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাজা চাটুকার দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকার কারণে নিন্দুকের সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। উপরন্তু নিন্দুকের যৌক্তিক পরামর্শকে রাজার আত্মীয়-স্বজনেরা ভুল ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাখ্যা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এতে করে নিন্দুকের ভাগ্যে জুটেছে রাজা প্রদত্ত শাস্তি।
 উদ্দীপকে নিন্দুকের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। নিন্দুককে আঁধার ঘরের আলো বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিন্দুক ব্যক্তিকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে দোষ-ত্রæটি ধরিয়ে দেয় বলে সে-ই প্রকৃত বন্ধু। মানুষের চরিত্রের কদর্য দিকগুলো নিন্দুক প্রকাশ করে দেওয়ার ফলে মানুষ সাবধান হয়ে যায়। কিন্তু ‘তোতাকাহিনী’ রচনায় নিন্দুকের কথা অগ্রাহ্য করার কারণে তোতা পাখিটিকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়।
 নিন্দুক যদি স্পষ্টভাষী হয়ে থাকে তবে তার মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের রাজা তাঁর প্রকৃত শুভাকাক্সক্ষীকে চিনতে পারেন নি। এতে রাজার সম্পদহানি যেমন হয়েছে তেমনই তোতা পাখিকে দিতে হয়েছে প্রাণ। রাজা নিন্দুককে শত্র“জ্ঞান করেছেন তাই নিন্দুকের জন্য শাস্তির আদেশ দিয়েছেন। উদ্দীপকে নিন্দুকের সমালোচনা করাকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়েছে। নিন্দুকের নিন্দাবাক্যকে স্বাগত জানানো হয়েছে। রাজা যদি উদ্দীপকের মতো নিন্দুককে স্বাগত জানাতে পারতেন তবে রাজার তোতা পাখির করুণ পরিণতি হতো না।
 পরীক্ষায় কমন উপযোগী জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. পাখিকে বিদ্যা শেখাতে বসলেন কে?
উত্তর : পাখিকে বিদ্যা শেখাতে বসলেন পণ্ডিত।
২. ভাগিনাদের গলায় কিসের হার চড়ল?
উত্তর : ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়ল।
৩. নিন্দুক কী রটাল?
উত্তর : নিন্দুক রটাল যে পাখিটি মরে গেছে।
৪. ‘স্যাকরা’ অর্থ কী?
উত্তর : স্যাকরা অর্থ ‘স্বর্ণকার’।
৫. খাঁচা বানানোর সিদ্ধান্ত কাদের?
উত্তর : খাঁচা বানানোর সিদ্ধান্ত রাজ পণ্ডিতদের।
৬. রাজা মন্ত্রীকে ডেকে কী বললেন?
উত্তর : রাজা মন্ত্রীকে পাখিটাকে শিক্ষা দিতে বললেন।
৭. রাজার পাখি কী পড়ত না?
উত্তর : রাজার পাখি শাস্ত্র পড়ত না।
৮. স্যাকরা কী বানাতে বসল?
উত্তর : স্যাকরা সোনার খাঁচা বানাতে বসল।
৯. কামার পাখির জন্য কী তৈরি করল?
উত্তর : কামার পাখির জন্য লোহার শিকল তৈরি করল।
১০. পাখির পেটে কী খস্খস্ গজ্গজ্ করতে লাগল?
উত্তর : পাখির পেটে পুঁথির শুকনো পাতা গজ্গজ্ করতে লাগল।
 পরীক্ষায় কমন উপযোগী অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. ভাগিনাদের গলায় সোনার হার চড়ল কেন?
উত্তর : পাখির শিক্ষার কাজ ভালোভাবে চলছে শুনে রাজা খুশি হয়ে ভাগিনাদের সোনার হার উপহার দিলেন।
তোতা পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার ভার পড়েছিল রাজার ভাগিনাদের ওপর। তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার নামে অর্থের অপব্যয় করতে শুরু করল। নিন্দুক এ ব্যাপারে রাজাকে সাবধান করলেও ভাগিনার তোষামোদে রাজা নিন্দুকের কথায় কান দিলেন না। বরং ভাগিনাদের কথায় সন্তুষ্ট হয়ে তাদের সোনার হার দিয়ে পুরস্কৃত করলেন।
২. তোতা পাখিটা অকালেই প্রাণ হারাল কেন?
উত্তর : স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হওয়ায় তোতা পাখিটা অকালেই প্রাণ হারাল।
 তোতা পাখিটা স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করত। মনের আনন্দে লাফাত, উড়ত। কিন্তু শিক্ষা দেওয়ার নামে খাঁচায় পোরা হলে তার জীবন থেকে সব আনন্দ হারিয়ে যায়। এর ওপর শিক্ষার নামে নির্মম অত্যাচার করার ফলে তার জীবনীশক্তি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে আসে। অবশেষে পাখিটি পৃথিবী থেকে অকালেই বিদায় নেয়।
 বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর
 সাধারণ
১. রবীন্দ্রনাথ কোন গ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন? ছ
ক সোনার তরী খ গীতাঞ্জলি
গ চোখের বালি ঘ ঘরে-বাইরে
২. রবীন্দ্রনাথের কত বছর বয়সে ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়? ছ
ক ১২ বছর খ ১৫ বছর
গ ১৭ বছর ঘ ১৮ বছর
৩. পাখিটাকে শিক্ষা দাও- কার উক্তি? ছ
ক মন্ত্রীর খ রাজার
গ ভাগিনা ঘ রানির
৪. লিপিকারের দল রাজার কাছ থেকে কী পেল? জ
ক হুমকি খ হার
গ পারিতোষিক ঘ বঞ্চনা
৫. রাজার ভাগিনাদের গলায় কিসের হার চড়ল? জ
ক রুপার খ হীরার
গ সোনার ঘ মুক্তার
৬. পাখির শিক্ষাশালা থেকে রাজা বের হয়ে এলে কে পাখিটার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়? ছ
ক মন্ত্রী খ নিন্দুক
গ ভাগিনা ঘ নিরাপত্তারক্ষী
৭. রাশি রাশি পাতা ছিঁড়ে কিসের সাহায্যে পাখির মুখের মধ্যে ঠাসা হচ্ছিল? ছ
ক কঞ্চির ডগা খ কলমের ডগা
গ লাঠির ডগা ঘ পেনসিলের ডগা
৮. রাজার নির্দেশে কাকে আচ্ছা করে কানমলা দেওয়া হয়? ঝ
ক ভাগিনাকে খ মন্ত্রীকে
গ চাকরকে ঘ নিন্দুককে
৯. পাখিটা দিনে দিনে ভদ্র-দস্তুরমতো কী হয়ে গেল? ছ
ক শিক্ষিত খ আধমরা
গ সুস্থ ঘ চালাক
১০. পাখিটা তার রোগা ঠোঁট দিয়ে কী কাটবার চেষ্টা করে? ছ
ক বইয়ের পাতা খ খাঁচার শলা
গ পায়ের বাঁধন ঘ খাবারের থালা
১১. পাখির জন্য লোহার শিকল তৈরি করতে কে এলো?
ক কামার খ কুমোর চ
গ তাঁতি ঘ জেলে
১২. রাজা কাকে শিরোপা দিলেন? জ
ক দফাদারকে খ চৌকিদারকে
গ কোতোয়ালকে ঘ পাহারাদারকে
১৩. পাখিটার শেষ পরিণতি কী হয়েছিল? চ
ক মারা গিয়েছিল খ অসুস্থ হয়েছিল
গ শিক্ষা হয়েছিল ঘ মুক্তি পেয়েছিল
১৪. পুঁথির শুকনা পাতা খস্খস্ গজ্গজ্ করতে লাগল কোথায়? ছ
ক খাঁচার মধ্যে খ পাখির পেটের মধ্যে
গ পণ্ডিতের থলের মধ্যে ঘ গ্রন্থাগারের মধ্যে
১৫. ‘তোতাকাহিনী’র শেষ লাইনে কোন ঋতুর কথা বলা হয়েছে? ঝ
ক গ্রীষ্ম খ শরৎ
গ শীত ঘ বসন্ত
১৬. ‘তোতাকাহিনী’তে সত্য প্রকাশকারীরা কী নামে পরিচিত হয়েছে? ছ
ক সত্যবাদী খ নিন্দুক
গ আপসহীন ঘ শুভাকাক্সক্ষী
১৭. ‘তনখা’ শব্দের অর্থ কী? চ
ক মুদ্রা খ আচার
গ অস্ত্র ঘ বখশিশ
১৮. ‘স্যাকরা’ শব্দের অর্থ কী? ঝ
ক বাহন খ মজাদার খাবার
গ ফলবিশেষ ঘ স্বর্ণকার
 বহুপদী সমাপ্তিসূচক
১৯. ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে নিন্দুকেরা ছিলÑ
র. ইতিবাচক
রর. গঠনমূলক
ররর. যুক্তিবাদী
নিচের কোনটি সঠিক? ঝ
ক র ও রর খ র ও ররর
গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
২০. ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে রাজার আত্মীয়দের মাঝে পাওয়া যায়Ñ
র. চাটুকারিতা
রর. স্বার্থপরতা
ররর. অন্তঃসারশূন্যতা
নিচের কোনটি সঠিক? ঝ
ক র ও রর খ র ও ররর
গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
২১. ‘তোতাকাহিনী’ গল্পে রাজা চরিত্রের জন্য প্রযোজ্যÑ
র. অসচেতন
রর. তোষামোদপ্রিয়
ররর. সত্যের প্রতি উদাসীন
নিচের কোনটি সঠিক? ঝ
ক র ও রর খ র ও ররর
গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর
২২. ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের সাথে নিচের যে প্রবাদ সামঞ্জস্যপূর্ণÑ
র. অসারের তর্জন গর্জন সার
রর. খালি কলসি বাজে বেশি
ররর. ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়
নিচের কোনটি সঠিক? চ
ক র ও রর খ র ও ররর
গ রর ও রর ঘ র, রর ও ররর
ন্ধ অভিন্ন তথ্যভিত্তিক
নিচের উদ্দীপকটি পড়ো এবং ২৩ ও ২৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও :
প্রচুর বিত্তের মালিক সাদেক সাহেবকে তার ভাগ্নেরা প্রভাবিত করে নির্বাচনে দাঁড় করাল। ভোট গ্রহণের আগের দিন পর্যন্ত প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেল তাঁর। ভাগ্নেরা সাদেক সাহেবকে ভোটে জেতার ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বাস দিলেও ভোটের দিন দেখা গেল, সাদেক সাহেব শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছেন।
২৩. উদ্দীপকের সাদেক সাহেবের সাথে ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের কার সাদৃশ্য আছে? চ
ক রাজা খ নিন্দুক
গ ভাগ্নে ঘ কানমলা সর্দার
২৪. উক্ত সাদৃশ্যÑ
র. অদূরদর্শিতার
রর. তোষামোদে বিভ্রান্ত হওয়ায়
ররর. বাস্তব জ্ঞানের অভাবে
নিচের কোনটি সঠিক? ঝ
ক র ও রর খ র ও ররর
গ রর ও ররর ঘ র, রর ও ররর

 

Leave a Reply